ড. মাজহারুল ইসলাম:
পৃথিবীর অন্যতম নিপীড়িত, নির্যাতিত, অত্যাচারিত, রাষ্ট্রহীন রিফিউজি জনগোষ্ঠীর নাম হচ্ছে রোহিঙ্গা। ১৯৬০ সাল থেকে তাদের প্রতি অন্যায় এবং অনাচার শুরু হয়, পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে তাদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে মায়ানমারের জান্তা সরকার তাদের প্রতি সম্পূর্ণরূপে অমানবিক আচরণ করে । আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তারা রাষ্ট্রহীন এবং রিফিউজি জনগোষ্ঠী, যাদের বসবাস হচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ায়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে, যাদেরকে আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়িয়েছে।
যদিও সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে কিছু কিছু বিতর্কিত মন্তব্যে ও পদক্ষেপের কারণে অর্জিত সুনাম আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য দেশের এবং বহির্বিশ্বের সুশীল সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে- বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা এত আরাম আয়েশে আছে ভবিষ্যতে তো আর আরাম থাকবে না, সুতরাং তাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি করবে, তারা কি থাকবে নাকি তাদের দেশে ফিরে যাবে। [৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ প্রথম আলো ]
পরবর্তীতে, ২০২১ সালে সিলেটে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে পরাষ্ট্রমন্ত্রী, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় অভিযুক্ত রোহিঙ্গাদের গুলি করার নির্দেশ প্রদান করেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থা থাকতে অভিযুক্ত অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কেন গুলি করার নির্দেশের প্রসঙ্গ আসবে তা সুশীল সমাজের নিকট বোধগম্য নয়। [২২ অক্টোবর ২০২১ প্রথম আলো] তাছাড়া বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আটকে পড়া পাকিস্তানিদের দেশের বোঝা হিসেবে উল্লেখ করেন। [১৭ অক্টোবর ২০২১ প্রথম আলো] যদিও, বি এন পির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেন- রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমান সরকার রোহিঙ্গা সমস্যা জিইয়ে রেখে আন্তর্জাতিক সুবিধা নিতে চাচ্ছে, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে। [২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ প্রথম আলো]
সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে থেকে বিতর্কিত মন্তব্য এবং বিরোধী দল কর্তৃক সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা জনমনে ধোঁয়াশার সৃষ্টি করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার কি রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চাচ্ছে নাকি এই সমস্যাটাকে জিইয়ে রেখে তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার পরিকল্পনা করছে ।
রোহিঙ্গা শরনার্থীদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ সরকারকে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে রোহিঙ্গাদের মোবাইল ব্যবহার সীমিত করার প্রসঙ্গটি আসে এবং তাদের দেশে ফেলে আসা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে যোগাযোগের করতে না পারার বিষয়টি বিষয়টি গুরুত্বের সহকারে প্রকাশ পায়। [৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ] আন্তর্জাতিক শরণার্থী বিষয়ক আইন এবং মানবাধিকার আইন অনুযায়ী প্রত্যেক শরণার্থী তাদের দেশে ফেলে আসা আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করার অধিকার রাখে। এখানে, বাংলাদেশ সরকার শরণার্থীদের যোগাযোগের অধিকারকে সমুন্নত করতে ব্যর্থ হয়। তাছাড়া বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী গণমাধ্যম দ্যা ইকোনোমিস্ট উল্লেখ করে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মোবাইল ব্যবহার সীমিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার নির্যাতিত একটি জনগোষ্ঠীকে আরো বিচ্ছিন্ন এবং দুর্যোগের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।[৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ]
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়া এবং সেখানকার ক্যাম্পগুলোর চারপাশে বেড়া নির্মাণ বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আহ্বান জানিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ ৫০টি মানবাধিকার সংগঠন। চিঠিতে বলা হয়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মুঠোফোন ব্যবহারে বাধা তৈরি করে। শরণার্থী ক্যাম্পগুলো আশপাশে ইন্টারনেটের কভারেজ সীমিত করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশের সরকার মুঠোফোন অপারেটরগুলোকে। শরণার্থীরা অভিযোগ করেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার মুঠোফোন ব্যবহারই নিষিদ্ধ করেছে। [২৬ জুন ২০২০ প্রথম আলো]
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুই বৎসর পূর্তিতে তারা একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করে, সমাবেশের অনুমতি প্রদান কারী কর্মকর্তাকে অপসারণ করে বাংলাদেশ সরকার, যা বিশ্বগ ণমাধ্যম গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়। [৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ] আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তির শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে বাংলাদেশ সরকার তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাদক ব্যবসা, চোরাকারবারি ও মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে সাংবাদিক কামাল আহমেদ প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন- ক্ষমতাশীল স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি ও মানবপাচারের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের ছত্রছায়ায় এবং তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এ সকল অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন, যা স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকা সহ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।[৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ প্রথম আলো]
রোহিঙ্গা শিবিরের ভেতর অবৈধ মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এই সংঘাতের কারণে অন্তত দুই হাজার রোহিঙ্গা তাদের আশ্রয়শিবির থেকে অন্যান্য আশ্রয়শিবিরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সংঘাতের জের ধরে শরণার্থীশিবিরে কয়েক ডজন আশ্রয়কেন্দ্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার ব্যর্থ হয় যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ এর ব্যত্যয়, যেখানে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, হোক সে বাংলাদেশি অথবা বাংলাদেশে সাময়িকভাবে অবস্থানকারী যে কোন দেশের নাগরিক। [৯ অক্টোবর ২০২০ প্রথম আলো] দুর্বৃত্তরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নেতা মুহিবুল্লাহকে গুলি করে হত্যা করে, যাতে বাংলাদেশের পুলিশ সহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চরম ব্যর্থতার প্রকাশ পায়। [২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ প্রথম আলো] মুহিবুল্লাহ আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের চেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন তিনি। পরবর্তীতে, রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর।[৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ প্রথম আলো] জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যার দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিলেন।[২ অক্টোবর ২০২১ প্রথম আলো] কিন্তু এখন পর্যন্ত তদন্ত আশার আলো দেখিনি।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্গম ভাসানচরে স্থানান্তর না করার জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই দুই মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়। [৩ ডিসেম্বর ২০২০ প্রথম আলো] ৩১ মে ২০২১ জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের দেখতে যান। সহকারী হাইকমিশনার রউফ মাজাও এবং গিলিয়ান ট্রিগ ছিলেন দলে। তাঁরা সেখানে পৌঁছানোর পরই ৫০০ থেকে ৬০০ জন রোহিঙ্গা বিক্ষোভ শুরু করেন। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে যেতে রাজি করাতে অর্থ ও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার লোভ দেখানো হয়েছিল বলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান রিফিউজি ইন্টারন্যাশনালের অভিযোগ তুলেন । [২৭ মে ২০২১ ব্যানার নিউজ আমেরিকান]
নিয়ম ভেঙ্গে ক্যাম্পের বাইরে আসায় কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ২ নারীসহ ২৮৭ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ।[৬ এপ্রিল ২০২২ প্রথম আলো ] অবৈধভাবে ক্যাম্পের বাইরে কাজ করতে যাওয়ায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে ২৫২ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।[৬ এপ্রিল ২০২২ প্রথম আলো ] যুক্তরাষ্ট্রের ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাচলের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং দেশত্যাগের ব্যাপারে বাধা দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।[১৫ ই মে ২০২২ ভয়েস অফ আমেরিকা] রোহিঙ্গাদের ৩৩টি ক্যাম্পের ভেতরেও স্বাধীন চলাচলের সুযোগ নেই। কখনো কখনো এক ক্যাম্প থেকে আরেক ক্যাম্পে যেতে চাইলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, ক্যাম্পের ভেতরে চলাফেরা করা গেলেও বাইরে আসলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, আটক করা হচ্ছে। যা মানবধিকার আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী কাজ এবং বাংলাদেশ সরকার এর দায় এড়াতে পারে না।
বাংলাদেশে শরণার্থীবিষয়ক আইন না থাকা এ ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। অবশ্য তার চেয়েও বড় বাধা হলো কয়েক লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী যারা সুরক্ষার আওতায় নেই। এ সকল স্বীকৃত-অস্বীকৃত উভয়ের জন্য বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দ্বার রুদ্ধ। শরণার্থী এবং মানবাধিকার আইন অনুযায়ী কোন শরণার্থী শিক্ষার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে না এবং আশ্রয়দানকারী সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে; এক্ষেত্রেও বাংলাদেশ সরকারের ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়। [২৯ জানুয়ারি ২০২২ প্রথম আলো]
যদিও বাংলাদেশ সরকার শরণার্থীবিষয়ক কনভেনশন ১৯৫১ এবং প্রটোকল ১৯৬৭ স্বাক্ষরকারী দেশ নয় তবুও বাংলাদেশ শরণার্থীদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য এড়াতে পারে না, কেননা উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার কনভেনশন গুলো বাংলাদেশ স্বাক্ষর করার মাধ্যমে মানবধিকার সমুন্নত করার অঙ্গীকার প্রদান করেছে। তাছাড়া উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ১০৫০৪ নং রিট পিটিশনের পর্যবেক্ষণে বলেন শরণার্থী বিষয়ক কনভেনশন ১৯৫১ প্রথাগত আইনে পরিণত হয়েছে, বাংলাদেশ স্বাক্ষর না করলেও কনভেনশনে উল্লিখিত বিধি-বিধান এড়িয়ে চলার কোন সুযোগ নেই। [রিফিউজি এবং মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) বনাম বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য]
পরিশেষে আমরা বলতে পারি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে সুনাম অর্জন করেছিল আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। এজন্য সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা আছেন তাদের সংযত হয়ে কথা বলতে হবে, লাগামহীন কোন কথা বলা যাবে না এবং পর্যবেক্ষণ-পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যাতে করে শরণার্থী এবং মানবাধিকার আইনের কোনো ব্যত্যয় না ঘটে।
লেখকঃ শিক্ষক এবং হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট।