নিজস্ব প্রতিবেদক:
দিন যত যাচ্ছে নানা কাণ্ডে আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে।
সরকারি নানা মহলের তদন্ত কমিটি, গ্রাহকদের সময়মত পণ্য দিতে না পারায় প্রতিষ্ঠানটি থেকে দিনে দিনে গ্রাহকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
এছাড়া অ্যালেক্সায় ইভ্যালির ভিজটরের অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দিন যত যাচ্ছে ইভ্যালির ভিজটর তত কমছে।
গ্রাহকরা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের নতুন নিয়ম অনুযায়ী অর্ডার ডেলিভারি করতে ব্যার্থ হয়েছে ইভ্যালি।
টি-১০ নামে নতুন অফার চালু করলেও প্রতিশ্রুত সময়ে ডেলিভারি না দেয়ায় টি-১০ থেকেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন গ্রাহকরা। গত কয়েকটি টি-১০ অফারের ভিজিটর এবং অর্ডার দেখে এমন অবস্থা জানা যায়।
দেখা যায় প্রথম দিকে টি-১০ অফারে ৭৮ হাজারের মত গ্রাহক ভিজিট করতো। তা কমে এখন ৪০ হাজারে এসেছে। আগের তুলনায় অর্ডার সংখ্যাও কমেছে অর্ধেক।

এই বিষয়ে শফিক রায়হান নামের এক গ্রাহক বলেন, আমি টি-১০ অফারে একটি মোবাইল অর্ডার করেছিলাম। প্রথম আমার কাছ থেকে ১০% টাকা নিল। তার কয়েকদিন পর বললো বাকী ৯০% টাকা দিলে তিনদিনের মধ্যে আমার মোবাইল ডেলিভারি দিবে। এই আশ্বাসে আমি ৯০% টাকা পেমেন্ট করে দেয়ার পর ইভ্যালি ভুয়া শিপড দেখিয়ে আমার টাকা আটকিয়ে রাখছে। ৪০ দিন পার হতে চললো এখনও অর্ডারটি দেয়নি। তাদের কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলে অপেক্ষা করার কথা বলে। এমন অবস্থায় আমি ইভ্যালির অফিসে যাই, তাদের কাছ থেকেও কোন সুস্পষ্ট ব্যাখা পাই নাই। তারা সাইক্লোনের মতই টি-১০ অফারেও গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করছে।
এদিকে গত রবিবার ইভ্যালির অফিসে গিয়ে দেখা যায় গ্রাহকদের হাহাকার। অ্যাপয়নম্যান্ট নিয়ে গ্রাহকরা তাদের প্রোডাক্ট না পাওয়া, চেক বাউন্স, রিফান্ডের টাকা না দেয়াসহ নানা সমস্যা নিয়ে ইভ্যালি অফিসে আসছেন। কিন্তু ইভ্যালির কর্মকর্তারা কোন সমাধান না দিয়ে অপেক্ষা করতে বলছেন।
এই বিষয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে ইভ্যালির এক কর্মকর্তা বলেন, আসলে আমরা চাকরি করি। কোম্পানি আমাদেরকে যা শিখায় দিচ্ছি আমরা তাই বলছি। অনেক কাস্টমারের অর্ডার ৪০০-৫০০ দিন পার হয়েছে, এসবের সমাধান কি দিব? তারপরও সরি বলে কোন রকম বুঝ দেয়ার চেষ্টা করি।
অন্য জায়গায় চাকরি খোঁজার কথা জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, এখানে এভাবে চাকরি করা সম্ভবনা। মানুষ টাকা দিয়ে যে কষ্ট করছে সত্যি এগুলো দেখলে ভাল লাগেনা। মিথ্যা আশ্বাস দিতে নিজেদেরও ভাল লাগেনা।

ইভ্যালির আরেক নারী কর্মকর্তা জানান, শেষ পর্যন্ত ইভ্যালির মনে হয়না ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। কারণ প্রতিষ্ঠানটি সাইক্লোনের অফারগুলো দিতে পারছেনা। এমন অবস্থায় যদি টি-১০ এর প্রোডাক্টগুলো ঠিকঠাক করে ডেলিভারি দিতে পারতো তাহলেও মানুষের ভরষার জায়গা একটু বৃদ্ধি পেত। মানুষ প্রথম দুটি টি-১০ ক্যাস্পেইনে ভালই অর্ডার করছিল। তারপর যখন দেখলো টি-১০ এর প্রোডাক্টও যথাসময় দিতে পারছেনা, তখন থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
ইভ্যালির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, একটা প্রতিষ্ঠানকে টিকাতে হলে অবশ্যই আপনাকে কথা কাজের মিল রাখতে হবে। এই শঙ্কটকালীন সময়েও যদি মানুষের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা নিয়ে ভুয়া শিপড দেখিয়ে মানুষের টাকা আটকিয়ে রাখা হয়, তাহলে মানুষ আর অর্ডার দিবেনা এটাই স্বাভাবিক। এইজন্য ইভ্যালির উচিত এমন একটা ক্যাম্পেইন রান করা, যেটাতে ঠিকমত ডেলিভারি দিতে পারবে।
এসব বিষয়ে জানতে ইভ্যালির সিও মোহাম্মদ রাসেলের সাথে নানা মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে নিজের ফেসবুকে মোহাম্মদ রাসেল এক পোস্ট দিয়ে জানিয়েছেন, একদিন তার প্রতিষ্ঠানে ৪০ লাখ মানুষ ভিজিট করবে। তবে তিনি তার এই পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, ৪০ হাজার ভিজিটর ইভ্যালির সাথে তুলনা করলে ভাল বলা যায়না।
আরও পড়ুন: ই-কমার্স লেনদেনে এবার কড়াকড়ি দিল বাংলাদেশ ব্যাংক
নিউজ গার্ডিয়ান/ এমএ/