নিউজ ডেস্ক:
ঢাকা: বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যু হার একটু কমে আসছে৷ আর সেই সাথে শিথিল হয়ে আসছে লকডাউন৷ আগামী ৫ মে পর্যন্ত লকডাউন বাড়ানো হলেও গণপরিবহন ছাড়া আর সব কিছুই এখন খোলা৷ গণপরিবহনও চালুর দাবি জানানো হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে৷
আর করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ঈদের পর ২৩ মে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলে মাধমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে৷
তবে বাংলাদেশে গত কয়েকদিনে করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও এখনই আশ্বস্ত হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রতিবেশী ভারতের যে করোনা পরিস্থিতি তাতে বাংলাদেশকে আরো সতর্ক অবস্থানে যেতে হবে৷
গত ১৪ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে ‘কঠোর লকডাউন’ শুরু হয়৷ এরপর দুই দফা বড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়েছে৷ তবে দোকানপাট, শপিংমল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকছে৷
এদিকে ভারতের সাথে বাংলাদেশে স্থল সীমান্ত বন্ধ রয়েছে৷ তবে পণ্য পরিবহন অব্যাহত আছে৷ বিমান যোগাযোগও বন্ধ আছে৷
বিএসএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন,” ভারতের অবস্থা বাংলাদেশে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ এখনো বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টটির উপস্থিতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ তবে সেটা যাতে ঢুকতে না পারে সেজন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিতে হবে৷”
করোনা বাংলাদেশে ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু কয়েকদিন ধরে একশ’র নিচে আছে আর সংক্রমণের হারও কমছে৷ কিন্তু একই সঙ্গে পরীক্ষাও কমছে৷ বৃহস্পতিবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে ৮৮ জন মারা গেছেন৷ সনাক্ত হয়েছেন দুই হাজার ৩৪১ জন৷ ২৪ ঘন্টায় সনাক্তের হার কমে শতকরা ৯.৪৯ ভাগ হয়েছে৷
এপর্যন্ত বাংলাদেশে করোনায় মারা গেছেন ১১ হাজার ৩৯৩ জন৷ আর সনাক্ত হয়েছেন সাত লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৫ জন৷
আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হেসেন বলেন,” পরীক্ষা বাড়তে হবে৷ আর পরীক্ষার ফি তুলে দিতে হবে বা আরো কমতে হবে৷ ততে টেস্ট বাড়বে এবং বাস্তব অবস্থা আরো ভালোভাবে বোঝা যাবে৷ সংক্রমণ এখনো ১০ ভাগের মত আছে৷ এটা শতকরা পাঁচভাগের নিচে না নামলে কমছে বলা যাবে না৷”
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে, লকডাউন হচ্ছে না৷ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে৷ তবে এটা আরো তিন- সাড়ে তিন মাস অব্যাহত রাখতে হবে৷ নাহলে পরস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে৷”
অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ কেনোভাবেই এখনো আশঙ্কার বাইরে যেতে পারেনি৷ আর এখন একটু কমছে, দুইদিন পর যে বাড়বে না তা কেউ বলতে পারে না৷ করোনার টিকা নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে৷ তাই এখন স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া উপায় নেই৷ মাস্ক পরতেই হবে৷ স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করার কোনো সুযোগ নাই৷
এখন দোকান, শপিংমল, মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মানাই বড় চ্যালেঞ্জ৷ গণপরিবহন চালু হলে এই চ্যালেঞ্জ আরো বাড়বে বলে মনে করেন ডা. মুশতাক হোসেন৷ বদ্ধ ঘরে কোনো সমাবেশ, অনুষ্ঠান করা যাবে না৷ আর এগুলো করতে হবে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে৷
তিনি বলেন, কিছুটা হলেও লকডাউনের সুফল পওয়া যাচ্ছে৷ আরো দুই সপ্তাহ পর ফলাফল আরো ভালো বোঝা যাবে৷ তবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হলে কোরাবানির পরেও লকডাউন চালিয়ে যেতে হবে৷
করোনার রোগীদের জন্য বেড এবং আইসিইউ বেডের সংকট অব্যাহত আছে৷ গত ২৪ ঘন্টায় ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ৫৮টি আইসিইউ বেড খালি দেখানো হলেও রোগীরা আইসিইউ বেড না পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন ন৷ ফলে কেউ কেউ বাসায় মারা যাচ্ছেন৷ গত ২৪ ঘন্টায় বাসায় মারা গেছেন তিন জন৷
দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে মানুষের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য দ্রুতই বিকল্প উৎস থেকে টিকা আনতে হবে৷ সূত্র: DW
নিউজ গার্ডিয়ান/ এমএ/