বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি:
কাজী মশিউর রহমান, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছে ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষকে নাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারন শিক্ষার্থী, সংগঠন কর্মীদের কাছে ছিলেন এক অনুপ্রেরণার যায়গা। নিজ ইংরেজি বিভাগের শ্রেনীকক্ষ ছাড়া্ও গাছতলা, মাঠ-ঘাট, নদীর পাড় ছিল তার অস্থায়ী শ্রেনীকক্ষ। যেখানে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখা শিখানো হতো, সমাজের প্রতি শিক্ষার্থীদের দায়িত্ববোধ জাগানো হতো, একজন ভালো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতেন ঐ অস্থায়ী শ্রেনীকক্ষে।
গতকাল বুধবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধায় সড়ক দুর্ঘটনায় তার আকস্মিক মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নেমে আসে শোকের ছায়া।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার সাথে সময় কাটানো কিংবা তার কোনো কথা শোনার অনুভুতিগুলো ছড়িয়ে পরে মুহুর্তেই।তার মৃত্যুতে থমকে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা- কর্মচারিদের মন!
তার অফিস রুমে ছিলো সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের পদচারণা। তাই অধিকাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন তাকে নির্দিষ্ট বিভাগের গন্ডিতে বন্দি করলে কম হয়ে যাবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের সরাসরি শিক্ষক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সি এস ই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী খন্দকার নিয়াজ মাহমুদ তার ফেসবুক টাইমলাইনে লেখেন,
“এই প্রথমবার একজন শিক্ষক হারানোর শুন্যতা বোধ করছি। বাংলা, ইংরেজী, অংক শেখালেই শিক্ষক হওয়া যায় না। একজন শিক্ষক কি অমূল্য জিনিস সেটা শিখিয়েছেন মশিউর স্যার। একজন ছাত্রের কি দায়িত্ব সেটা শিখিয়েছেন এই মশিউর স্যার। কেন এই বিশ্ববিদ্যালয়, কি কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের, কেন এর নাম বিশ্ববিদ্যালয়, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতি সাধারন মানুষদের এত আস্থা, এসব কিছুর উত্তর শিখেছি এই মশিউর স্যার এর কাছ থেকে। তিনি বলেছিলেন, গুনী হওয়া টা মূখ্য নয়, মানবিক হওয়াটাই মূখ্য। তার শেখানো কাজ গুলো করবো কিন্তু মাঝপথে আটকে গেলে সেখান থেকে পরিত্রান এর জন্য আর কাউকে পাশে পাবো না। একেকটি ঘাস কোন অংশে মানুষের থেকে কম দামি নয়, এই কথাটার ওজন আজ বুঝতে পারছি। বিশ্ববিদ্যালয় একজন শিক্ষক হারালো। এই ক্ষতি পূরন করার জন্য আর কোন মশিউর রহমান আসবে কি না জানি, হয়তো আসবে তবে সেই সময়কাল টা অনেক বছর পর। স্যার, তার শেখানো কাজে সবসময় অমর হয়ে থাকবেন।
আমি একজন মশিউর রহমান স্যার এর ছাত্র ছিলাম। আমি সৌভাগ্যবান।
আল্লাহ আমার স্যার কে জান্নাতবাসী করুক। এতগুলো শিক্ষার্থীর চাওয়া আল্লাহ ফিরিয়ে দেবেন না হয় তো।“
জানা যায় কাজী মশিউর রহমান, তার স্ত্রী এবং একমাত্র সন্তানকে নিয়ে অটোরিকশায় নিজ বাসা পিরোজপুর থেকে গোপালগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন গতকাল, পথিমধ্যে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস ঐ অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়, শিক্ষকের মাথার পিছনের অংশে গুরুতর আঘাত লাগে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থানীয় মেডিকেলে নিয়ে গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে । সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিউজ গার্ডিয়ান/ এমএ/