মহাবন আমাজনের একটি বিষাক্ত প্রজাতির পিঁপড়ার নাম প্যারাপোনেরা ক্লাভাটার। এর এক কামড়ে ২৪ ঘণ্টা একটানা ব্যথা অনুভূত হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার মতই যন্ত্রণা দেয় এই পিঁপড়ার কামড়। বেশিরভাগ সময়ই ব্যথা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে যায় মানুষ।
কিন্তু আমাজনের সাতেরে মাওয়ে উপজাতির পুরুষেরা এই পিঁপড়ার কামড় খেয়ে নিজেদের পুরুষত্বের প্রমাণ দেন। বুলেট নামক ভিমরুলের আকৃতির সেই পিঁপড়ার বিষাক্ত কামড় সহ্য করে যারা শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে তারাই পেয়ে যায় বীরপুরুষের খেতাব। এর পরই একজন সাতেরে মাওয়ে পুরুষ পান শারীরিক সম্পর্ক করার অনুমতি।
জঙ্গল থেকে তারা পিঁপড়াগুলোকে সংগ্রহ করে পাতা দিয়ে তৈরি একজোড়া গ্লাভসের মধ্যে। এদিন অনুষ্ঠিত হয় একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। বাঁশ দিয়ে ঘেরা চারকোণা একটি জায়গায় উপস্থিত হয় পরীক্ষার্থীরা। ঠিক যেন খোঁয়ারে ঢুকেছে সে! এরপর বয়স্ক কোনো ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী যুবার হাতে গ্লাভসটি পরিয়ে দেন।
এই পরীক্ষা শুরু হয় বারো বছর বয়স থেকেই। কম বয়সী ছেলেরা পাঁচ মিনিটের জন্য হাতে সেই গ্লাভস পরে পিঁপড়ার কামড় সহ্য করে। বয়স বাড়লে অবশ্য দশ মিনিট বা তারও বেশি সময় এই পরীক্ষা দিতে হয়। এই অগ্নিপরীক্ষার সময় যখন ছেলেটি যন্ত্রণায় কাতরায় তখন বাকিরা গান এবং নৃত্যে ব্যস্ত থাকে। ব্যথা ছাড়াও, এটি কয়েক ঘণ্টার জন্য শরীরকে অবশ করে দেয়।
অ্যামাজনের আরেকটি উপজাতি হচ্ছে ইয়ানোমামি। এরা ভেনেজুয়েলা ও ব্রাজিল সীমান্তের দিকে বসবাস করে। এখানে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০টি গ্রামে বসবাস করে এই ইয়ানোমামি ট্রাইবরা। অন্যান্য উপজাতিদের মতো ইয়ানোমামিদেরও রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও রীতিনীতি।
এই আদিবাসীর কেউ মারা গেলে তাকে ভক্ষণ অরে বিশেষ ভাবে সম্মানিত করে। মৃতদেহের হাড্ডিগুলো পুড়িয়ে তার ছাঁই দিয়ে স্যুপ বানিয়ে খায় পরিবারের সদস্যরা। তবে পোড়ানোর আগে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়। প্রথমে মৃতদেহটি পাতায় মুড়িয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪৫ দিন জঙ্গলে ফেলে রাখা হয়। তারপর পঁচে যাওয়া সেই মৃতদেহ থেকে সব হাড় সংগ্রহ করে পোড়ানো হয়। সেই হাড় পোড়ানো ছাঁইয়ের সঙ্গে পঁচা কলা মিশিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ স্যুপ।
ইয়ানোমামিদের বিশ্বাস মৃত্যু বলে আসলে কিছু নেই। তারা মনে করে তাদের শত্রুপক্ষ শ্যামোন গোষ্ঠীর সদস্যরা কোনো পিশাচকে পাঠালে তবেই ইয়ানোমামি সম্প্রদায়ের কারো মৃত্যু ঘটে। মৃতের হাড্ডি পুঁড়িয়ে ফেললে এর সঙ্গে সঙ্গে পিশাচও পুড়ে মারা যাবে। আর তারপর তাকে পোড়ানো ছাঁইয়ের স্যুপ যদি সবাই মিলে পান করে তবে সেই আত্মা পরবর্তী সময়ে আবার জন্ম নেয়। যুগের পর যুগ তারা কাটিয়ে দিচ্ছে স্বজনদের মৃতদেহের স্যুপ খেয়ে।
#নিউজ গার্ডিয়ান/এমআই/