আর লাভ ছাড়া একটি পন্যও বিক্রি করবেনা ইভ্যালি বলে জানিয়েছেন ইভ্যালির সহ-প্রতিষ্ঠাতা শামীমা নাসরিন। এসময় তিনি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে দুষলেন আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সহ-প্রতিষ্ঠাতা শামীমা নাসরিন। নতুন পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেন শামীমা নাসরিন। এসময় তিনি গত পরিচালনা পর্ষদের প্রধান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এইচ এম সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করেন।
ইভ্যালির সহ-উদ্যোক্তা শামীমা নাসরিন মনে করেন, ইভ্যালির সবচেয়ে বড় ভুল ছিল সঠিক সময়ে বিনিয়োগ উত্তোলন না করা এবং গ্রাহক ও বিক্রেতাদের পাওনা দিয়ে ব্যবসা গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, “আমাদের স্বপ্ন ছিল চীনের জ্যাক মার মতো। যদি সে ই-বেকে পেছনে ফেলে ব্যবসায়িক কৌশল দিয়ে পৃথিবীর বুকে আলিবাবাকে একটি গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারবো না? এই লক্ষ্যে মোহামম্দ রাসেল ই-কমার্স বিজনেস শুরু করেন। আমাদের মূল লক্ষ্যই ছিল পণ্য বিক্রয়ে পরিচালন ব্যয় কমিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণীয় মূল্যে সর্বোত্তম সেবা প্রদান করা।”
প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে চলবে, তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম কেমন হবে এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, এসব বিষয় জানাতে এই অনলাইন সংবাদ সম্মেলন করে ইভ্যালি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির আগের অর্ডার, রিফান্ড ও ডেলিভারির বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
তবে এখানে কোনো প্রতারণা ছিল না দাবি করে শামীমা নাসরিন বলেন, “আপনারা বাড়ি করার জন্য অগ্রিম অর্থ দেন। এখন ডেভেলপার আপনাকে সঠিক সময়ে বাড়ি বুঝিয়ে দিতে না পারলে সেটা অন্যায়। তবে এই বিজনেসকে অন্যায় বলা সঠিক নয়। আমাদেরটা বাড়ি না, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ছিল এবং প্রাথমিক দায় ভবিষ্যৎ মুনাফা দিয়ে পরিশোধ করার পরিকল্পনা ছিল। আমরা মনে করি, এই পরিকল্পনায় আমাদের ত্রুটি ছিল। নতুন এই যাত্রায় আমরা প্রথম দিন থেকে মুনাফা করে পণ্য বিক্রি করবো। যেহেতু আমাদের সঙ্গে সরকার এবং ই-ক্যাব প্রতিনিধি আছেন, সেহেতু আগের ভুলের পুনরাবৃত্তির সুযোগ নেই।”
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরিন এর আগে ইভ্যালির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন।
শামীমা নাসরিন বলেন, অডিট রিপোর্টের আগেই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক না বুঝে কথা বলেছেন গণমাধ্যমে। তিনি একবার বলেছেন ইভ্যালির চার হাজার ৮০০ কোটি টাকার হদিস নেই। পরে আবার বলেছেন ৪৭ হাজার কোটি আছে। তার এই বারবার ভুলের মাধ্যমে প্রমাণ হয় তিনি হয়তো সঠিক তথ্য বুঝতে পারেননি। না হয় ইচ্ছা করে ইভ্যালিকে নিয়ে এসব কথা বলছেন তিনি।
শামীমা নাসরিন অভিযোগ করে আরো বলেন, আমরা নাকি অনেকবার দুবাই গিয়েছি। অথচ আমরা দুবার মাত্র দুবাই গিয়েছি। তাও ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে।
সংবাদ সম্মেলন ইভ্যালির দেনার পরিমাণ তুলে ধরতে গিয়ে নাসরিন বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারের যতগুলো মামলা হয়েছে, সেগুলো খুবই সামান্য। প্রায় ২০ কোটি টাকা পাওনার মামলা হয়েছে। মো. রাসেল যেসব মামলায় আটক রয়েছেন, সেগুলো সর্বমোট দেড় কোটি টাকার মামলা। গ্রেফতারের আগে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলেছিলাম আমাদের দেনা আনুমানিক ৪০০ কোটি টাকা। সেজন্য ছয় মাস সময় চেয়েছিলাম। আমরা সেই সময় পাইনি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা মূলত গ্রাহকের পাওনা পরিশোধে বিলম্ব হওয়ার অভিযোগ এবং চেক ডিজঅনার সম্পর্কিত। যারা মামলা করেছেন শুধু তাদেরই অর্থ ফেরত দেওয়া নয়, আমরা চাই সবার অর্থই ফেরত দিতে। আমরা যেহেতু বিজনেস করার সুযোগ পেয়েছি, মহামান্য আদালত লাখ-লাখ গ্রাহক এবং বিক্রেতার স্বার্থে শিগগিরই মো. রাসেলকে জামিন দেবেন বলে আমরা আশা করি। আমরা যেকোনো শর্তে জামিন প্রার্থনা করব।
গ্রাহকদের আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে ইভ্যালির সহ-প্রতিষ্ঠাতা শামীমা নাসরিন বলেন, আমাদের পরিচালনায় হাইকোর্ট থেকে নিয়োজিত দুজন ইন্ডিপেন্ডেন্ট ডিরেক্টর নিয়োজিত আছেন। মাহবুব কবির মিলন (সাবেক অতিরিক্ত সচিব) স্যারও আমাদের সবসময় গাইড করছেন। আমাদের যেন কোনো ভুল না হয়, সে বিষয়ে তিনি আমাদের সতর্ক করে যাচ্ছেন। কোম্পানি অপসারণ না করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল— এটি যেন আমরা প্রমাণ করতে পারি, সে ব্যাপারে তিনি আমাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন।
ইভ্যালির উদ্যোক্তা মো. রাসেলের মুক্তি বিষয়ে বলেন, মোট আটটি মামলায় মো. রাসেল আটক রয়েছেন। চেকের কিছু মামলা যেগুলো জামিনযোগ্য, সেগুলোর জামিন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এরকম মামলার সংখ্যা ১৫টি। আমরা সবাই কামনা করি যেন এ ব্যাপারে পজিটিভ কোনো আপডেট গ্রাহকদের আমরা দিতে পারি।
এসময় শামীমা নাসরিন এক বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে ব্যবসা করার সুযোগ চিয়ে বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি এবারের যাত্রায় প্রথম দিন থেকে ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে। দেনা পরিশোধ করতে দরকার বিনিয়োগ। বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। দেশে অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান আছে যাদের বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে। আমরাও চেয়েছিলাম বিদেশি বিনিয়োগ আনতে। তারপরও নিরবচ্ছিন্নভাবে এক বছর ব্যবসা করতে পারলে আমাদের সব দেনা পরিশোধ করতে পারবো।
গ্রাহকদের টাকা আটকের বিষয়ে নাসরিন বলেন, সার্ভারের জটিলতার কারণে আমাদের গ্রাহকদের টাকা আটকে আছে। সার্ভার জটিলতা কাটাতে অ্যামাজনের সঙ্গে মো. রাসেলের সরাসরি কথা বলার সুযোগ দরকার। সার্ভার খুলতে পারলেই আটকে থাকা টাকা দিতে পারবেন বলে জানান বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের প্রধান।