স্বপ্নীল সাগর:
শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যে শব্দ গুলো সবার আগে তার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাবা শব্দটি। এ যেন সন্তানের কাছে চিরন্তন আস্থার প্রতীক। শিশু যখন বাবা উচ্চারণ করতে শেখে তখন বাবার মন পুলকে ভরে যায় বাবার হাস্যোজ্জ্বল সেই অনুভূতি অবুঝ শিশুটির হৃদয়কে আন্দোলিত করে।ডাকটার মাঝেই লুকিয়ে থাকে কি গভীর ভালোবাসা, নিরাপত্তা, নির্ভরতা।
বাবার মাঝে জড়িয়ে আছে বিশালত্বের এক অদ্ভুত মায়াবী প্রকাশ। বাবা নামটা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে কোনো বয়সী সন্তানের হৃদয়ে শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসার এক অনুভব জাগে। মানুষটি কতভাবে অবদান রেখে যান সন্তানের জন্য, যার চুলচেরা হিসাব করে কেউ বের করতে পারবেন না। বাবার পকেট কি একটা ব্যাংক?
টাকা নিখোঁজ হবে জেনেও টাকা রাখার জায়গাটা পাল্টাননি তিনি। অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে অভুক্ত থেকেছেন তিনি কত দিবানিশি।বাবার কাঁধটা কি অন্য সবার চেয়ে বেশি চওড়া? তা না হলে কি করে সমাজ সংসারের এতো দায়ভার অবলীলায় বয়ে বেড়ান বাবা। বাবার পা কি অন্য সবার চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত চলে? নইলে এতোটা পথ এতো অল্প সময়ে কি করে এতো শক্ত করে সব কিছু আগলে রাখেন বাবা। আর বাবার ছায়া …?
সেটাও শেষ বিকেলের বটগাছের ছায়ার চাইতেও বড়। বড় যদি না হবে তবে জীবনের এতো উত্তাপ থেকে কি করে সন্তানকে সামলে রাখেন বাবা আর বাবার চোখ? সেটাও কি দেখতে পায় কল্পনার অতীত কোনো দূরত্ব। তা না হলে কি করে সন্তানের ভবিষ্যত্ ভাবনায় শঙ্কিত হন বাবা। সত্যি বলতে কি বাবাকে নিয়ে আমরা কেউই এমন করে কখনও ভাবি না।
শুধু আমাদের বাবা, শত সাধারণের মাঝেও অসাধারণ হয়ে ওঠা আমাদের জনক, আমাদের অকাতরে ভালোবেসে যান তার সামর্থ্যের শেষ বিন্দুটুকু দিয়ে। উজাড় করে দেন তার সবকিছুই শুধু তার সন্তানের জন্য। তার যা কিছু আছে নিজের জন্য আর অবশিষ্ট রাখেন না কোনোভাবেই। সবকিছু উজাড় করে দেয়ার পরও তাকে কোনোভাবে নিঃস্ব বলে মনে হয় না। মনে হয় তিনি যেন পরম তৃপ্তিতে আরও পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। বরং শ্রমে ঘামে স্নেহে সন্তানকে তিলে তিলে বড় করে তুলতে সচেষ্ট বাবা মহান সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্যেও ফরিয়াদ জানান তার সন্তানের মঙ্গলের জন্য। আর বাবার সেই আহ্বান হয়ত গর্বিত করে তোলে অন্তর্যামীকেও।
মনে রাখবেন, সন্তান যত বড়ই হোক না কেন তার অভিমান আর অবহেলার পরিমাণ যত বিশালই হোক বাবার স্নেহ সবসময় তার জন্য এক পরম আশ্রয়। বেঁচে থাকার আনন্দে, কষ্টের তীব্রতায়, কঠিন সমস্যায় বাবাই হয়ে ওঠেন বিপদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বন্ধু বা সহায়। অন্যদিকে সন্তান হিসেবে আপনাকে ভাবতে হবে বাবার কথা। তার আবেগ অনুভূতি আর পরিণত বয়সের চাওয়া পাওয়াগুলোর দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। যে বয়সে স্কুল-কলেজে নতুন নতুন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে সময়গুলো বেশ জমে উঠেছে সে সময়টাতে ভুলে যাওয়া চলবে না পুরনো বন্ধুকে। বরং পুরনো দিনের কথা মনে রেখে নিজের জীবনের এই খোলস ছাড়াবার মুহূর্তে যদি বাবাকেও সঙ্গী হিসেবে নেয়া যায় তাহলে বরং চেনা বন্ধুরাও নতুন রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে জীবনের কঠিন পথে হোঁচট খাওয়ার ঝুঁকিটা কমে। আবার যারা পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে দিব্যি কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন আয়-উপার্জন শুরু করেছেন তাদেরকেও সময় করে ভাবতে হবে বাবার কথা। অফিসের ব্যস্ততা আর নানা ঝামেলার মাত্রাটা যতই সীমা ছাড়িয়ে যাক না কেন বাড়িতে ফিরে যাবার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক মিনিটের জন্য হলেও তার পাশে বসতে হবে গল্পের ঝুড়ি নিয়ে।
নাবিকের মতো সারাজীবন নৌকা বেয়ে, পরিশ্রম করে, নিজের সাধ – আহ্লাদকে ত্যাগ করে, সবকিছু বিসর্জন দিয়ে একটা বাবার শেষ পরিনতি কি বৃদ্ধাশ্রম হওয়া উচিত??
কখনোই না, কখনোই না।
সন্তানের জন্য উৎসর্গ প্রতিটি বাবার জীবনই ঠাঁই পাক সন্তানদের মনন, মগজে, হৃদয়ে।
কারণ বাবা মানেই একটুকরো ছাদ, মাথার উপর বিশাল আকাশ। তাই স্বরচিত ছন্দে বলতে ইচ্ছে করে-
আমি প্রশান্ত মহাসাগরের নীল জলরাশি দেখিনি
কখনও মাপতে যাইনি এর প্রশস্ততা,
দেখেছি বাবার আত্নবিসর্জন, নিজেকে তুচ্ছ ভেবে
সন্তানের জন্য সহ্য করা নিদারুণ যন্ত্রনা
পালটে যাওয়া এ পৃথিবীতে, অসহায় যখন আমি।
কাঁধে হাত দিয়ে বুঝিয়ে দাও কতটা আপন তুমি।
সর্বোপরি বাবা এক নির্ভরতা আর একরাশ নিরাপত্তার অনুভূতি।ছোট-বড় অক্ষত বিখ্যাত সকলের কাছেই বাবা অসাধারণ ।বাবার স্নেহ ভালোবাসা সকলেরই প্রথম চাওয়া পাওয়া।
সবকটা বিপদে তিনি বুকে আগলে রাখেন তার সন্তানদের নির্ভীক নাবিকের মতো….
সন্তান হিসেবে যতটুকু প্রাপ্য সম্মান, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য তিনি ততটুকু দিয়েই তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে তার যোগ্য সন্তান আপনি। সবসময় ভালো থাকুক বাবা নামের প্রতিটি নীরব বটবৃক্ষ।।
লেখক: স্বপ্নীল সাগর, শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
নিউজ গার্ডিয়ান/ এমএ/