ইবি প্রতিনিধি,
ছাত্রলীগ নেত্রী দ্বারা রাতভর অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীর ঘটনা এবার শুনতে চেয়েছে বাংলাদেশ হাইকোর্ট। ঘটনার সুনানির সময়ও বেধে দিয়েছে বিজ্ঞ আদালত৷ এদিকে অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে সরব হয়েছে সকল পর্যায়ের ছাত্রসংগঠন। তদন্তে করা হয়েছে তিন-তিনটি কমিটি। ঘটনায় ছাড় দিতে চাচ্ছেন না ক্ষোদ ছাত্রলীগও। তদন্ত কমিটি করাসহ সংবাদ সম্মেলনও করেছেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দরা। বিভৎসরুপি পৈশাচিক এই ঘটনার বিচার চাইছেন সকলেই।
জানা যায়, নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল বুধবার জনস্বার্থ মামলার আওতায় রিট আবেদন (আবেদন নং- ২১০৫) দায়ের করা হয়েছে। এতে বাদি হয়ে রিট দায়ের করেছেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন। এতে বিবাদী করা হয়েছে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরি অন্তরা, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুমসহ বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও হল-প্রভোস্টকে। আজ এর শুনানী ও আদেশ হবে বলে জানিয়েছেন গাজী মো. মহসীন। তিনি বলেন, পাবলিক ইন্টারেস্ট লিটিগেশনের (জনস্বার্থ মামলা) আওতায় র্যাগিংয়ের ব্যাপারে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট চেয়ে রিট আবেদন করেছি। বৃহস্পতিবার শুনানী ও আদেশ হবে। এর আগে ঘটনাটি নিয়ে সময়ের আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর অভিযোগের বিপরীতে পাল্টা অভিযোগ জানিয়েছেন অভিযুক্তরা। ঘটনা মিথ্যা দাবি করে এবং প্রকাশিত সংবাদের বিচারের দাবিতে কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতৃ অন্তরা ও সহযোগী তাবাসসুম। এতে হলের আবাসিক ছাত্রীদের স্বাক্ষর দেখা যায়। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকেও অভিযোগ পত্রে অনেকের স্বাক্ষর দেয়াসহ জোরপূর্বক কয়েকজনকে স্বাক্ষর করানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রী।
ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি করেছে দেশরতত্ন শেখ হাসিনা হল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। উভয় কমিটিকেই ৭ কার্যিদবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। হল কর্তৃপক্ষের করা চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আহসানুল হককে আহ্বায়ক করে হলের আবাসিক শিক্ষক হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইসরাত জাহান ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৌমিতা আক্তারকে সদস্য করা হয়েছে। এছাড়াও হলের শাখা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাকও কমিটিতে রয়েছেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে করা কমিটিতে আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রেবা মন্ডলকে আহ্বায়ক ও একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) আলীবদ্দীন খানকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুরশিদ আলম।
এদিকে নির্যাতনের ঘটনায় ক্যাম্পাসে সরব হয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলো। ঘটনার বিচারের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন শাখা ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র মৈত্রীসহ শাখা ছাত্রদল। একইসাথে বিশ্ববিদ্যলয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
একইসাথে ঘটনায় ছাড় দেননি ছাত্রলীগও। র্যাগিংয়ের সাথে জড়িতদের অপরাধী দাবি করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করেছে সংগঠনটি৷ এতে সহ-সভাপতি মুন্সি কামরুল হাসান অনিককে আহ্বায়ক করে বনি আমিন, রাকিবুল ইসলাম, জাকির হোসেনকে সদস্য করা হয়েছে৷ সেইসাথে আগামী পাচঁ দিনের মধ্যে তাদেরকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে৷
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়ালী হাসান ইনান বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখাকে জোরালোভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের র্যাগিং ও হয়রানি করা ছাত্রলীগের কাজ না। আমরা তাদের সুখ- দুঃখের সাথী হতে চাই।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেষ আবদুস সালাম বলেন, র্যাগিংয়ের ঘটনা অবশ্যই নিন্দনীয়। শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয়েই নয় কোথাও এটি
এলাও নয়। বিষয়টি তদন্ত করতে কমিটি করেছি। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফুলপরি নামের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীকে কয়েকদফায় নির্যাতন করেন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরি অন্তরাসহ তার কয়েকজন সহযোগী৷ এসময় তারা ওই ছাত্রীকে শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন৷ মুখ খুললে সেই ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিলে পরদিন ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি চলে যান ভুক্তভোগী। বিষয়টি জনসম্মুখে আসার পর পুরো ক্যম্পাসে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এর কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আর এরুপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায় না তারা।